অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের একটি টিম। ২ অক্টোবর সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত নয়া এডি সালেহ উদ্দিনসহ কয়েকজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কার্যক্রমের জন্য বিদায় নেয়া ডিডি নুরুল হুদাকেও ডাকা হতে পারে।

এদিকে দুদকের টিম প্রবেশ করার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা তাদের মোবাইল ফোনে সেইভ করা দালালদের নাম্বার তড়িঘড়ি করে ডিলিট করে ফেলেন। আর দুদকের দিনভর অভিযানের খবরে যশোরাঞ্চলে সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে সাংকেতিক চিহ্ন, চ্যানেল সিস্টেম ও ৫০ দালালের মাধ্যমে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাসে ৬৬ লাখ টাকা আদায়ের বিষয়টি।

ভুক্তভোগীদের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বর মাসে সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উঠে আসে কোনো রকম হয়রানী ছাড়াই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যশোরে আবেদনপত্র জমা করাতে হলে দালাল অফিসের মাধ্যমে ফাইল রেডি করে সাংকেতিক চিহ্ন নিয়ে আসতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। গড়ে প্রতিদিনে ৩শ’ আবেদনপত্র জমা নেয়া হচ্ছে এভাবেই। আর দালালের সম্পৃক্ততা ছাড়া আবেদনগুলো নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

কয়েকদিন ঘুরে ঘুরে জমা দিতে পারলেও তার সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে ১০ শতাংশের কম। প্রতি আবেদনে দালালরা পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে দিচ্ছেন ৯শ’ থেকে ১১শ টাকা। আর দালালরা পাবলিকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি খরচ বাদেও ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি।

বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর থেকে এ বিষয়টি নিয়ে যশোরাঞ্চলের সর্বত্র জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছে। এরই মধ্যে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার ১০৬ নাম্বারে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেন অনেক ভুক্তভোগী।

দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, পাসপোর্ট সংশ্লিষ্টদের অব্যাহত অনিয়ম দুর্নীতি জন হয়রানীর অভিযোগ পেয়ে ২ অক্টোবর সকাল ১১ টার দিকে দুনীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় পুলিশের দুজন সদস্যও ওই টিমের সাথে ছিলেন। টিম প্রবেশ করার খবরে পাসপোর্ট অফিসে চ্যানেল ও দালাল সাংকেতিকে সংশ্লিষ্ট স্টাফরা মোবাইল ফোন থেকে সেইভ করা দালালদের নাম্বার মুছে ফেলেন। এছাড়া অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে কয়েক দালালকে দায়িত্ব দেয়া হয় কোনো দালাল যেনো পাসপোর্ট অফিসে না ঘেঁসে, এমনকি কেউ যেনো ফোন না করে।

এদিকে, দুদকের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের টিম পাসপোর্ট অফিসের সকল শাখায় খোঁজ খবর নেন। আবেদন জমা গ্রহণ, জমা আবেদনের ব্যাপারে কথা বলেন। এছাড়া অভিযোগগুলোর উপরে নানা প্রশ্ন করেন সংশ্লিষ্টদের। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফাইল দেখেন এই টিম। নয়া সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিভিন্ন সেকশন ঘুরে দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলেন। সকাল ১১ টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ওই টিম কাটান পাসপোর্ট অফিসে। এসময় সহকারী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সব স্টাফরা বিচলিত হয়ে পড়েন।

এব্যাপারে দুনীতি দমন কমিশন যশোরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে ওই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সহকারী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক উপ পরিচালক নুরুল হুদাকেও ডাকা হতে পারে। ঢাকায় দেয়া অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের একটি প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকায় পাঠানো হবে।